বিবিধ

পঙ্গপাল কি এবং কেমন ঝুঁকিতে বিশ্ব?

0
পঙ্গপাল

ঘাসফড়িং এর একটি সমগোত্রীয় জাত এই পঙ্গপাল।এই পতঙ্গ বিশাল বিশাল ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ করে মাঠের পর মাঠ ফসল উজার করে দেয়। ১০ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক দিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। 

ভয়ঙ্কর মহামারী আকারে আবির্ভূত হওয়া এই পতঙ্গ পঙ্গপাল সম্পর্কে আজ আমরা জানবো—

পঙ্গপাল কি?

পৃথিবীর প্রাণী জগতের মধ্যে অন্যতম বিস্ময়কর আচরণ পঙ্গপালের। পৃথিবীতে অন্য কোন প্রাণীর পঙ্গপালের মত এত দ্রুত এত বড় দলে নাটকিয় ভাবে আবির্ভূত হয় না।পঙ্গপাল ঘাসফড়িং এর মধ্যে পার্থক্য হল ঘাসফড়িং একা চলতে পারে কিন্তু পঙ্গপাল একা চলতে পারে না, পঙ্গপাল সবসময় দলবদ্ধভাবে চলে। 

একক পঙ্গপাল কে ইংরেজিতে বলা হয় “LOCUST” আর এদের ঝাঁক কে বলা হয় “LOCUST SWARM”। একা থাকা কালিন পঙ্গপাল কৃষির জন্য তেমন ক্ষতিকর নয় তবে কিছু কিছু প্রকৃতিগত কারণেই এরা মারাত্মক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। পঙ্গপালের মস্তিষ্কে বিকাশের পরিবর্তনের ফলে এরা অতি দ্রুত বহুসংখ্যক সন্তান জন্মদান করে এবং ধীরে ধীরে সামান্য থেকে বিশাল দল গঠিত অসম্ভব রকমের ব্রীদ্ধি পেলে এদের মধ্যে উড়ে বেড়ানোর প্রবৃদ্ধি জাগে। তখন তারা খাদ্যদ্রব্যের লোভে লোভে নতুন নতুন খাবারের সন্ধান খুঁজে বের করে। যতক্ষণ কোন এলাকার খাদ্যশস্য আছে ততক্ষণ তারা টিকে থাকে এবং খাদ্যশস্য শেষ হয়ে গেলে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং সেই এলাকা ত্যাগ করে। পঙ্গপালের উপদ্রব  ঠেকাতে  এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। মাটিতে পঙ্গপালের ডিম দীর্ঘদিন টিকে থাকে, এমনকি ২০ বছর পরেও মাটিতে পড়ে থাকা পঙ্গপালের ডিম থেকে বাচ্চা হতে পারে। তবে বাচ্চা পঙ্গপাল উঠতে পারে না অল্প বয়সে পতঙ্গ গুলো লাফিয়ে চলে। সাধারণত একটি বাচ্চা পঙ্গপাল পূর্ণবয়স্ক হতে চার সপ্তাহ সময় লাগে। পূর্ণবয়স্ক হবার পর তাদের শারীরিক গঠন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার নিজের ওজনের সমান খাদ্য গ্রহণ করে। আর এক ঝাঁক পঙ্গপাল একদিনে কয়েক হাজার টন খাবার খেয়ে ফেলতে পারে এবং এর পতঙ্গ গুলো প্রতিনিয়ত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। যাতায়াতের সময় পঙ্গপাল নিজের দেহের শক্তি সঞ্চয় করে বাতাসের উপর ভর করে চলতে থাকে।। বাতাসের গতি পথ অনুসরন করে চলার ফলে বাতাস যেদিকে যায় পঙ্গপাল সেই দিকে আক্রমণ করে। একেকটি পঙ্গপালের ঝাঁক যাত্রাপথ আরো নতুন নতুন পঙ্গপালের ঝাকের সাথে মিলিত হয়। কয়েকটি বড় বড় পঙ্গপালের ঝাঁক একত্রিত হয়ে আরো বেশি বড় ঝাক তৈরি করে এবং 1 বিলিয়ন পর্যন্ত পঙ্গপাল থাকতে পারে এক একটি ঝাঁকে। এই বিশাল আকৃতি পঙ্গপালের ঝাঁক তাদের চলার পথের সকল খাবার সাবার করে যায়। এইসব পতঙ্গ কোন এলাকায় আক্রমণ করলে সেই সব এলাকার গাছের পাতা ও অবশিষ্ট থাকে না। ।

বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থেও পঙ্গপালঃ

পঙ্গপালের ইতিহাস বহু বছর পুরানো। গ্রিসের ইলিয়াডে এই পতঙ্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া কোরআন এবং বাইবেলের মতো বহু ধর্মগ্রন্থেও পঙ্গপালের কথা বলা হয়েছে এবং এই সকল ধর্ম গ্রহণ পঙ্গপালের আক্রমণ কে ঈশ্বরের প্রদত্ত শাস্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে

সারা বিশ্বে পঙ্গপালের উপদ্রব:

আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য আর পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ঝাকবদ্ধ পঙ্গপাল এবং বিশ্বের প্রায় 30 টি দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে জাতিসংঘ। বিশেষত ফসলের মৌসুম প্রচুর মাত্রায় পঙ্গপাল হানা দেওয়ায় চরম খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে পতঙ্গ পঙ্গপালের বসবাস বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হর্ন অফ আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে 400 ভাগ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আফ্রিকার মরু অঞ্চল গুলোতে এমন বৃষ্টিপাতের কারণে পঙ্গপালের বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। 

পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে এসব মরু পতঙ্গের আক্রমণের কারণে জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্য হন অফ আফ্রিকা নামে পরিচিত ইথিওপিয়া সমালিয়া জিবুতি ঝাকে ঝাকে বাড়ছে পঙ্গপাল। এসব এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে। এছাড়াও কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম ওগান্ডার উত্তর-পূর্বের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ সুদানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হানা দিচ্ছে পঙ্গপাল। জিবুতি ও ইরিত্রিয়ায় ৩৬ হাজার কোটি পতঙ্গের আক্রমণে খাদ্য নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব হুমকি তৈরি হয়েছে আগামী এপ্রিলে এই পঙ্গপাল নতুন করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। নতুন ধরনের পঙ্গপালের একটি ঝাঁক দিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার সাবাড় করে ফেলতে পারে।

Pongopal

বর্তমানে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ( এফএও) খাদ্য সংগ্রহের মৌসম চলছে কিন্তু পঙ্গপালের কারণে খাদ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পঙ্গপাল আরো কয়েক মাস জীবিত থাকবে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি ও আক্রমণের ফলে সেখানে আরও ফসলহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের একজন বিশেষজ্ঞের মতে পঙ্গপাল প্রতিদিন তাদের নিজেদের ভরের সমপরিমাণ খাবার খেয়ে ফেলতে পারে এবং তিনি আরও বলেন ম্যানহাটন আকৃতির পঙ্গপালের একটি ঝাঁক গোটা নিউইয়র্ক এর জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সাবাড় করতে পারে প্রতি ১ কিলোমিটারের ঝাকে ৪ থেকে ৮ কোটি পতঙ্গ থাকে।

এদিকে ঝাঁক বদ্ধ পঙ্গপালের আক্রমণে নাকাল পাকিস্তান ও ভারত। পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে পাকিস্তানের বিস্তৃত এলাকার বিভিন্ন ধরনের শস্য নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে দেশটির তুলা গম ও ভুট্টার আবাদ। পূর্বাঞ্চলে পতঙ্গের আক্রমণের ফলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান সরকার।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে পতঙ্গটি। সেদেশের কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা আরো বিস্তৃত এলাকায ঢুকে পড়তে পারে পতঙ্গটি। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণে পরে পাকিস্তান। এই ধাপে ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানের প্রথম পঙ্গপালের আক্রমণ সনাক্ত করা হয় পরে এটি সিন্ধু ও দক্ষিণ পাঞ্জাবে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখ লাখ রুপি। পহেলা ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফিরদৌস আশিক আওয়ান বলেন” দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে পঙ্গপালের সবথেকে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছি আমরা” ।

পঙ্গপালের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ:

বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পর পাকিস্তান এবং সর্বশেষে ভারতে আক্রমণ চালানোর পর বাংলাদেশেও পঙ্গপালের আক্রমণ হতে পারে তবে সে ঝুঁকি এ বছরের চেয়ে আগামী বছর বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এ জেড এম সাব্বির ইবনে জাহান বলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবার তাদের একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে পঙ্গপালের আক্রমন সংক্রান্ত সতর্কতাঃ এবং প্রস্তুতি রাখার জন্য। তিনি আরো জানান আমাদের আশঙ্কা পাকিস্তান ও ভারতের পর বাংলাদেশেও আসতে পারে এই পঙ্গপাল তবে আমরা যতটা বুঝতে পারি এবছর তেমন কোনো ঝুঁকি নেই তবে আগামী বছর আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এর কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতা অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গায় খোঁজ করে তারা সে কারণে কৃষি অধিদপ্তরের সংখ্যা বাংলাদেশ আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের। তিনি আরো জানান পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা তবেগত ৫৫ বছরের মধ্যে পঙ্গপালের আক্রমন হয়নি এ অঞ্চলে।

জাতিসংঘের মতে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে বাতাসে মাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও আফ্রিকায় পঙ্গপালের যে ভয়াবহতা তাতে শুধু কীটনাশক ব্যবহার করে ফল মিলবে না। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি । বিশ্লেষকরা বলেছেন পঙ্গপালের এই পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। ওমানের মরুভূমিতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক বৃষ্টি হওয়ায় এই পঙ্গপাল গুলো আফ্রিকায় চলে গেছে বলে দাবি করেন জাতিসংঘের পঙ্গপাল পূর্বাভাস বিষয়ক কর্মকর্তা কিথ ক্রিসম্যান। আমরা জানি বিগত ১০ বছরে ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ই-কমার্স সাইটের ধরন ও বানানোর খরচ !

Previous article

করোনা (COVID-19) মোকাবেলায় সুপার কম্পিউটার ও এ.আই প্রযুক্তি !!

Next article

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published.