আহসান মঞ্জিল প্রাসাদটির প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি যিনি ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর জমিদার। যা ঢাকার নবাব পরিবারের বাসস্থান এবং এর আগে এটাই ছিল নবাবদের কাচারি। আর নওয়াব আব্দুল গনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ_র নামানুসারে আহসান মঞ্জিল এর নামকরন করেন।এই ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং সম্পন্ন হয় ১৮৭২ সালে। ভবনটি পুরাতন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এই নবাবি ভবনটি জাতীয় জাদুঘর এর মর্যাদা পেয়েছে।
ভবনটির উত্তর-পূর্ব কোণে শেখ এনায়েত উল্লাহর কবর থাকলেও ১৯ শতকের শুরুতে কবরটি অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। ১৭৪০ সালে নবাব আলিবর্দি খাঁর শাসনামলে শেখ এনায়েত উল্লাহর পুত্র শেখ মতিউল্লাহ ফরাসি বণিকদের কাছে পুরো সম্পত্তিটি বিক্রি করে দেন। এখানে শেখ এনায়েত উল্লাহর সম্পত্তির পাশেই ফরাসিদের একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। সম্পত্তিটি কেনার পর বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে ওঠে। সেসময় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের একটি ডিক্রি অনুযায়ী ফরাসিরা খাজনা না দিয়ে ব্যবসা করতে পারত। সেসময় ইংরেজ এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করে । ফরাসিরা ক্রয় করা সম্পত্তিতে একটি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করে এবং মিষ্টি পানির জন্য ‘লেস জাল্লা’ নামে একটি পুকুর খনন করে। আহসান মঞ্জিল চত্বরে এখনও পুকুরটি রয়েছে।
ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে ফরাসিরা পরাজিত হলে ফরাসিদের সব সম্পত্তি ইংরেজরা দখল করে নেয়। ১৭৫৭ সালের ২২ শে জুন প্রায় ৩৫টি নৌকার বহর নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ফরাসিরা তাদের বাণিজ্য কেন্দ্রটি ত্যাগ করেন। ১৭৮৫ সালে ফরাসিরা তাদের সম্পত্তি জনাব চামপিগনি নামক একজন ফরাসি বণিকের কাছে হস্তান্তর করলেও ১৮০১ সালে আবার এসব সম্পত্তি অধিগ্রহন করে। দিন দিনে ইংরেজদের ক্ষমতা বৃদ্ধির কারনে ফরাসিরা উপমহাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। সুতরাং, ফরাসিরা ঢাকায় তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৮৩০ সালে কুমারতলীতে অবস্থিত ফরাসিদের বাণিজ্য কেন্দ্রটি ক্রয় করেন ঢাকার প্রতিষ্ঠিত জমিদার খাজা আলিমুল্লাহ। পুরাতন ভবনের সংস্কার করার পাশাপাশি খাজা আব্দুল গনি পুরাতন ভবনের পূর্বদিকে আধুনিক নকশায় একটি নতুন ভবন নির্মাণ করেন। সেসময় থেকে পুরাতন ভবনটিকে বলা হয় ‘অন্দর মহল’ এবং নতুন ভবনটিকে বলা হয় ‘রঙমহল’। খাজা আব্দুল গনি এবং তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহ প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণে মনোনিবেশ করেন এবং দুটি ভবনই স্থানীয় প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের তত্ত্বাবধানে নতুন নকশায় নতুন করে নির্মাণ করা হয়। রঙমহলের সাথে মিল রেখে পুরাতন ফরাসি ভবনটি একটি দোতলা ভবনে রুপান্তর করা হয়।
৭ই এপ্রিল ১৮৮৮ সালে সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি শক্তিশালী টর্নেডো আঘাত হানে এবং এর ফলে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। আহসান মঞ্জিলকে ক্ষতিসাধিত হওয়ার কারনে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। নওয়াব আহসানুল্লাহ সংস্কার ও উন্নয়ন করেন। এ সময় রংমহলের উপরে সুদৃশ্য গম্বুজটি সযোজন করা হয়।১৮৯৭ সালের ১২ জুন১২ ভয়াবহ ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং নওয়াব আহসানুল্লাহ মেরামত করেন। সংস্কারের অভাবে ১৯৬০ সালে আহসান মঞ্জিল জরাজীর্ণ হয় এবং সেখানে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নওয়াব পরিবারের সদস্যরা নিলামে কিনে নেয়।
পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে নওয়াব পরিবারের উত্তরাধিকারীগণ সংরক্ষণের অভাবে আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।১৯৭৪ সালের ২ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রির প্রস্তাব বাতিল করে দেন এবং সংস্কার পূর্বক এখানে জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন এবং ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর সরকার সামরিক বিধি জারির মাধ্যমে আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তার কাছের ৫.৬৫ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪.৯৬ একর জাদুঘরকে দেওয়া হয়।১৯৮৬ সালের ৩ মার্চ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আহসান মঞ্জিল বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে দেয় এবং ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ শেষে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দর্শকদের জন্য খুলে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।২০০৫-২০০৬- দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার কাজ শুরু হয় এবং আংশিক কাজ বাকি রেখে ২০০৬ সালে তা শেষ হয়। ২০০৮ সালের অসমাপ্ত কাজ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজস্ব খাত থেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়।
বেশ ভাল লাগল