মার্কিন সরকার বিশ্বের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কোম্পানী হুয়াওয়ে-কে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে তাদের সাথে বানিজ্য করার ক্ষেত্রে। এর ফলে হুয়াওয়ের সাথে আমেরিকান কোম্পানিগুলো আর ব্যবসা করতে পারবে না। ফলে হুয়াওয়ের সাথে ব্যবসা বন্ধ করেছে গুগল,মাইক্রোন,এআরএম সহ অনেক কোম্পানী। এরা হুয়াওয়েকে পার্টস সরবরাহ করতো। আর এতে বিপাকে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় স্মার্টফোন নিমার্তা কোম্পানী হুয়াওয়ে।
এখন কথা হচ্ছে, হুয়াওয়ে কি পারবে আমেরিকান কোম্পানীগুলো ছাড়া স্মার্টফোন বানাতে?
হুয়াওয়ের কাছে এখন দুটি উপায় আছেঃ
১) আমেরিকান কোম্পানী বাদে নতুন সাপ্লায়ার খুঁজে বের করা ।
২) নাহলে স্মার্টফোন বানানো বন্ধ করে দেওয়া।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি চলে আসে, আসলে কি হুয়াওয়ে পারবে আমেরিকান কোম্পানীর সাহায্য ছাড়া স্মার্টফোন বানাতে। এর উত্তর হচ্ছে, হ্যা হুয়াওয়ে পারবে। কারন তাদের হাতে আমেরিকান কোম্পানি ছাড়াও স্মার্টফোন বানানোর উপায় আছে।
হুয়াওয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ম্যানুফেকচারিং হার্ডওয়্যার চায়না থেকেই পেয়ে যাবে। এছাড়া তারা বাকি কিছু হার্ডওয়্যার জাপান, সাউথ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে নিতে পারবে।
হুয়াওয়ে নিজেই তার প্রসেসর বানিয়ে থাকে যার নাম কিরিন ( Huawei Kirin Chips)। এটি তারা হুয়াওয়ে হাই-সিলিকন ফ্যাক্টরি থেকে বানিয়ে থাকে। তবে এইখানে তারা আমেরিকান কোম্পানী এআরএম(ARM) এর কিছু কম্পোনেন্ট ব্যবহার করে থাকে, যেটা এখন থেকে আর ব্যবহার করা যাবে না। তারা এই কম্পোনেন্ট গুলো নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারে।
অনেকগুলো গুরত্বপূর্ন পার্টস হুয়াওয়ে আমেরিকান কোম্পানী থেকে নিয়ে থাকে। যেমনঃ
১) কোরনিং গরিলা গ্লাস
২) মাইক্রোন কোম্পানীর ফ্ল্যাশ স্টোরেজ
৩) নেটওয়ার্ক কম্পোনেন্ট ৩জি, ৪জি।
৪) আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অপারেটিং সিস্টেম অ্যানড্রয়েড।
এখন দেখুন হুয়াওয়ে কিভাবে এই হার্ডওয়্যারগুলো আমেরিকান কোম্পানী ছাড়া নিতে পারেঃ
১. হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের ডিসপ্লের জন্য আরেকটি প্রোভাইডারকে বেছে নিতে হবে । হুয়াওয়ের পার্টনার হতে পারে এজিসি আশাহি গ্লাস (AGC Asahi) , এটি একটি জাপানি কোম্পানি ।
সম্প্রতি গুগল তার নতুন পিক্সেল থ্রিতে গরিলা গ্লাসের পরিবর্তে ড্রাগনট্রেইল (এজিসি আশাহি গ্লাস – AGC Asahi) ব্যবহার করেছে ।
২. মাইক্রনের বদলে তোশিবা ও স্যামসাংয়ের মতো সরবরাহকারী বেছে নিতে পারে হুয়াওয়ে ।
হুয়াওয়ের হাই-সিলিকন কোম্পানি তার নিজস্ব স্টোরেজ কম্পোনেন্ট বানানোর জন্য কাজ করছে । এছাড়া হুয়াওয়ের নিজস্ব ন্যানো মেমরি কার্ড আছে।
৩. হুয়াওয়ের নিজস্ব ফ্রন্ট-এন্ড নেটওয়ার্ক মডিউল বানানোর দরকার হতে পারে যদি ইউনিভার্সাল নেটওয়ার্কে কাজ করতে চায়।
এ বছরের শুরুতে হুয়াওয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে তার 5G মাল্টি-মোড চিপসেট Balong 5000 বানিয়েছে। এটি 2G, 3G, 4G এবং 5G নেটওয়ার্ক এক চিপে এবং আল্ট্রা-ফাস্ট 5G সমর্থন করে । তাই এটিও হুয়াওয়ের জন্য সমস্যা হবে না।
৪. গুগল হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড লাইসেন্স বাতিল করেছে।
হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘ হংমেং ‘ বানিয়েছে এবং এর উন্নতি করছে । প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে অনেক দেশে ওএস ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করেছে এবং অ্যাপ ডেভেলপারদের তাদের অ্যাপ গ্যালারীতে অ্যাপ্লিকেশন বানানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছে ।
যা বদলানোর দরকার নেই:
১. ওএলইডি স্ক্রিন:
হুয়াওয়ে স্যামসাং ও এলজি থেকে ওএলইডি স্ক্রিন ব্যবহার করে এবং পাশাপাশি ছোট চীনা প্রস্তুতকারক বিওই (BOE) থেকে স্ক্রিন নিয়ে থাকে । হুয়াওয়ের ডিসপ্লে পাওয়ায় তাই কোনো সমস্যা হবে না ।
উপরন্তু, জাপান ডিসপ্লের জন্য আরেকটি বিকল্প মাধ্যম হতে পারে ।
২. র্যাম ও ক্যামেরা:
হুয়াওয়েই তার ডিভাইসের জন্য র্যাম তৈরি করে না । এটি P30 Pro এর জন্য দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানী এসকে হাইনিক্স (SK Hynix) থেকে LPDDR4X RAM ক্রয় করে। হুয়াওয়েই তার প্রসেসরের বানানোর সাথে সাথে RAM-এর নির্মাতাও হতে পারে ।
এছাড়া হুয়াওয়ে ক্যামেরার জন্য একটি চায়না কোম্পানী (সানি অপটিক্যাল) ব্যবহার করে থাকে।
এখন আবার একই প্রশ্ন । আমেরিকান যন্ত্রাংশ ছাড়া হুয়াওয়ে (Huawei) কি ফোন বানাতে পারবে ? উত্তরটা নিশ্চিতভাবে “হ্যা পারবে“।
এদিকে, ট্রেড ব্ল্যাকলিস্টের ফলে কোয়ালকম, ইন্টেল, এক্সআইএক্স সহ হুয়াওয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিপ সরবরাহকারীকেও প্রচুর ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে । এখন দেখার বিষয় হুয়াওয়ে কিভাবে তাদের স্মার্টফোন ম্যান্যফেকচারিং করে। সময় বলে দিবে হুয়াওয়ে কি পারবে তাদের এক নাম্বার স্মার্টফোন ম্যান্যফেকচারার হওয়ার স্বপ্নপুরন করতে।
অসাধারন একটি ইনফরমেশন। হুয়াওয়ে সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।